শুক্রবার, ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ,২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
Mujib

/

এর সর্বশেষ সংবাদ

রাজশাহীতে কুখ্যাত ভূমি প্রতারক ফারজানা’সহ আটক-৩

রাজশাহী প্রতিনিধি: অভিনব কায়দায় প্রতারণা, জমি দখল, একই জমি বিভিন্ন জনের নিকট বায়না, বায়না’র পরে তালবাহানা, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাসায় ঢুকে বাড়ি দখল, অতঃপর মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ নানা হয়রানি’র মূলহোতাসহ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আটক করেছে রাজপাড়া থানা পুলিশ।

বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) মধ্য রাতে অভিযান পরিচালনা করে ঐ তিন প্রতারককে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন রাজপাড়া থানা পুলিশ।

আটক তিন প্রতারক হলেন, নগরীর লক্ষীপুর এলাকার রেজাউল ইসলামের স্ত্রী এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর ফারজানা হক (৪৬), একই এলাকার মৃত ফাইজুদ্দিনের ছেলে রেজাউল ইসলাম (৫৩) ও উপশহর এলাকার মৃত আব্দুল হাফিজ খানের ছেলে তোফায়েল (৫৪)।

জানা যায়, এই প্রতারক চক্রের বড় একটি সিন্ডিকেট একই জমি বিভিন্নজনের কাছে বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রের মূলহোতা ফারজানা হক। ফারজানা হকের সাথে আরও একাধিক প্রতারক এই কাজের জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।তাদেরও গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করবেন প্রশাসন, এমনটাই বলছে পুলিশ।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগী সুত্রে জানা যায়, পবা উপজেলা’র আলীগঞ্জ মৌজা, জেএল নং-আরএস ৬২ মধ্যে আরএস খতিয়ান নং ২২৪, প্রস্তাবিত খতিয়ান নং ৭১০৪, জমাবন্দি নং ৬৮৮৯, খারিজ কেস নং ৭৩৫/৯-১/২০২২- ২০২৩, পরিমান ০.১৬২৯ একর জমি কয়েকজন ব্যক্তি’র নিকট বায়না করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র।পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বায়নামাকারী ভুক্তভোগী রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুল খালেক (৪৪) বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন।সেই মামলায় তিন প্রতারক আটক হয়।প্রতারকরা এখন জেলহাজতে আছে।

আব্দুল খালেকের মতোই একই জমি নিয়ে বায়না মূলে প্রতারিত হয়েছেন মোল্লাপাড়া এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে সাজ্জাদ বাদশা, বহরমপুর এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে শফিকুল ইসলাম, আলীগঞ্জের জাইদুল ইসলামের ছেলে আব্দুল গাফফার, দামকুড়া হাট এলাকার কাজিম উদ্দিনের ছেলে শরিফুল ইসলাম।

ভুক্তভোগীদের দাবি, ওই নারী বায়নার মাধ্যমে আরও অনেক জনের কাছ থেকেই টাকা হাতিয়ে রেখেছেন। নগরীর উপশহর এলাকায় বি-৩০৫ বাড়িটি ফারজানা হক প্রতারণা’র মাধ্যমে দখল করে আছেন। তাঁর শ্বশুর বাড়িটিও বিভিন্ন জনের নিকট বায়না করে পরে ছেলে মেয়ে বিক্রি করতে দিচ্ছে না মর্মে কয়েকজনের সাথে প্রতারণা করেন। প্রতারণা শেষে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত না দিয়ে তাদের হয়রানি করতে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে বিভ্রান্তিকর তথ্যদিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে। মামলাবাজ ফারজানা কথা কথা মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে এবং সে নিজেও বিভিন্ন জনের বিরুদ্ধে বহু মামলা করেছেন।

সূত্র মতে, অভিযুক্ত ফারজানা গত বছরের ২৩ জুন বায়না দলিলের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকায় ৬ মাসের প্রথম বায়না করেন মোল্লাপাড়া এলাকার সাজ্জাদ বাদশা সাথে। এর দুই মাসের মাথায় ১৭ আগস্ট পূর্বের বায়না বাতিল না করেই চুপিসারে ৩৭ লাখ টাকায় দ্বিতীয় বায়না কররেন বহরমপুর এলাকার শফিকুলের সাথে।এদিকে দ্বিতীয় বায়নার ৪ মাস না যেতেই ২৯ ডিসেম্বর তারিখে ওই নারী আবারো গোপনে ৪৫ লাখ টাকার নিয়ে তৃতীয় বায়না করেন বসুয়া এলাকার আব্দুল খালেকের সাথে।

বিষয়টি বাদশা জানার পর ঝামেলায় না গিয়ে অভিযুক্ত ফারজানাকে টাকা ফেরত দিতে বলেন। গত ২৬ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বাদশা ও ফারজানা পবা ভূমি সাব রেজিস্টারের অফিসে উপস্থিত হলে বিষয়টি তৃতীয় বায়নাকারী আব্দুল খালেক জানতে পারেন।তিনি সাবরেজিস্টারের অফিসে গিয়ে হাজির হয়ে ফারজানাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে।এর পর ফারজানার সামনে হাজির হয় দ্বিতীয় বায়নাকারী শফিকুল।

এসময় পবা দলিল লেখকদের উঠানে এনিয়ে বিচার শালিশ শুরু হয়। আব্দুল খালেক বায়নার বাকি টাকা দিয়ে পুরো জমি রেজিস্ট্রি নিতে চান।

আব্দুল খালেক জানান, ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় ফারজানার প্রায় ১০ কাটা জমি নেয়ার জন্য বায়না দলিল করা হয়। বায়নার সময় তাকে ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। দলিল মতে, বাকি টাকা ৬ মাসের মধ্যেই তাকে বুঝিয়ে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এর মধ্যে জানতে পারি ফারজানা অন্যদের কাছেও বায়না করে টাকা নিয়েছেন। তিনি এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রেখেছেন। এখন আমি বায়নার বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি নিতে চাইলে তিনি জমি দিতে রাজি না। এমনকি তিনি যার যার সাথে বায়না করেছেন তাদের কাউকেই জমি রেজিস্ট্রি দিতে চাচ্ছে না।এতে করে আমরা সবাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

শফিকুল হক জানান, তার সাথে ৩৭ লাখ টাকা বায়না করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যমানুষের কাছেও ফারজানা জমি বায়না দিয়ে টাকা নিয়েছেন। এই নারী প্রতারণার মাধ্যমে নানা মানুষের কাছ থেকে জমি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।

বাদশা বলেন, আমার সাথে বায়না করে পরে আরও অনেকের সাথে বায়না করেছে দেখে ঝামেলা এড়াতে আমি টাকা ফেরত চাই। ২৬ জানুয়ারি পবা রেজিস্ট্রি অফিসে বায়না বাতিল করে টাকা ফেরত নিতে আসলে অন্যান্য বায়নাকারীরাও সেখানে এসে উপস্থিত হয়। সবার কাছ থেকে দলিল করে টাকা নিলেও ওই নারী এখন কাউকেই জমি দিতে চাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে রাজপাড়া থানা’র ওসি এসএম সিদ্দিকুর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলে,তিনি ফোন রিসিভ করেননি।ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ