
রাজশাহী ব্যুরো: রাজশাহীর বেলপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। এক নারীকে উদ্ধার করে তার নিজ বাড়িতে পৌছে দেয়ার ব্যাবস্থা করেছেন তিনি৷ এ ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
জানা গেছে, গত শুক্রবার ( ৭ মার্চ) রাতে সাংবাদিক শাহ্ সোহানুর রহমান একটি ইফতারের দাওয়াত শেষে বাড়িতে ফেরার পথে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার কামারধাদাশ গ্রামে সাধারণ মানুষের জমায়েত দেখতে পান। তিনি অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে দেখেন একজন অপরিচিত মেয়ে লোকজনের মাঝখানে বসে আছেন৷ তার সাথে কথা বলছেন একজন বৃদ্ধ মহিলা। রাত বেড়ে যাওয়া দেখে নিকটস্থ বেলপুকুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদকে বিষয়টি অবগত করেন তিনি। সাংবাদিকের দেয়া তথ্যমতে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠান ওসি। পুলিশ এসে মেয়েটির সাথে কথা বলে বুঝতে পারে মেয়েটি মানুষিক ভারসাম্যহীন৷ রাত ১০ টার পর মেয়েটিকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রাতে তাকে শাহমাখদুম থানার ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। তার বাসায় থানা একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌছে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন ওসি আবুল কালাম আজাদ। ওই মেয়ের বাসা নাটোরের বড়াইগ্রামে।
সাংবাদিক সোহানুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে বাড়িতে ফেরার পথে দেখি অনেক মানুষের উপস্থিতি। খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি একজন সাবালিকা মেয়ে আনুমানিক ২৫ থেকে ২৬ বছর বয়স হবে সেখানে বসে আছে৷ তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে জানতে পারি তার বাড়ি নাটোর। বিষয়টি আমি আমাদের বেলপুকুর থানার ওসিকে জানালে তিনি একটি টিম পাঠিয়ে তাকে থানায় নিয়ে যান। রোববার ওসি আমাকে জানান, দেশের ধর্ষণের মত ঘটনা দৈনিক ঘটছে তাই তিনি মেয়েটিকে সার্বিক হেফাজতের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
সিদ্ধান্ত মত আমাকে বিষটি মাথায় নিয়ে সেচ্ছাসেবীর দায়িত্ব পালনে আহ্বান জানান। মানবিক এই ওসির কথা আমি ফেলতে পারিনি। তাই রাতে একজন মহিলা গ্রাম পুলিশ ও ও সেচ্ছাসেবী মোখলেছুর রহমান বিজয় ভাইকে সাথে নিয়ে নাটোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সেখান থেকে নাটোর তদন্ত পুলিশ আমাদের সাথে গিয়ে তাকে বাড়িতে পিতামাতার জিম্মায় দিয়ে আসে। ওসির এই মানবিকতায় সাড়া ফেলেছে পুরো এলাকায়৷ এলাকাবাসী বলছে স্যারের প্রমোশন হলে দেশের জন্য অনেক ভালো কিছু করতে পারবে৷ আমরা এমন মানবিক ওসি পেয়ে গর্বিত।
বিউটির বাবা বলেন, আমার মেয়ে মানুষিক ভারসাম্যহীন। এমনি ঔষুধ খাওয়াচ্ছিলাম। পাবনায় ভর্তি করাতে গেছিলাম। ২০ হাজার টাকা চেয়েছে তাই ভর্তি করাতে পারিনি৷ তবে কেউ সহযোগিতা করলে চিকিৎসা করাতে পারলে আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে যাবে হয়তো। তবে বিউটি বলছেন, তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তেমন আগ্রহ নেই তার প্রতি। তার দায়িত্ব নেয়ার মতো তো কেউ নেই।
আরএমপির বেলপুকুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বেলপুকুর থানাধীন কামার ধাদাশ গ্রামের সাংবাদিক শাহ্ সোহানুর রহমান ও একজন সমাজসেবকের ফোনের মাধ্যমে জানতে পেরে পুলিশ পাঠিয়ে দিয়ে ২২ থেকে ২৩ বছরের একজন মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। সে ঠিকানা সব কিছু বলতে পারে কিন্তু সামান্য ভারসাম্যহীন মোনে হয়৷ তার বাবা মায়ের সাথে কথা বললে তারা অস্বীকৃতি প্রকাশ করে। রাত বেশি হওয়ায় প্রাথমিকভাবে শাহমাখদুম ভিক্টিম সেন্টারে রাখা হয়। পরের দিন একাধিকবার তার বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা তারা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারপর বেলপুকুর এলাকার কিছু সেচ্ছাসেবী ও একজন গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় তার নিজ বাড়ি পৌছে দেয়া হয়েছে।