শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সৌদি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়: আদালতে মেঘনা আলম

যায়যায়কাল প্রতিবেদক: সাবেক ‘মিস আর্থ বাংলাদেশ’ মেঘনা আলম আদালতকে বলেছেন, কেবল সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আলদুহাইলানের সঙ্গেই তার প্রেমের সম্পর্ক, অন্য কারো সঙ্গে নয়।

বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম মাসুম মিয়ার আদালতে তোলা হলে বিচারকের অনুমতি নিয়ে এ কথা বলেন মেঘনা।

রূপবতীদের দিয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের প্রেমের ফাঁদে ফেলার অভিযোগে ধানমণ্ডি থানায় দায়ের করা প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির জন্য তাকে এ আদালতে হাজির করা হয়।

আট দিন আগে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে মেঘনা আলমকে আটক করার পর বিশেষ ক্ষমতা আইনে এক মাসের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে তার বিরুদ্ধে ওই প্রতারণার মামলা দায়ের করে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ বুধবার মেঘনাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার এবং তার ‘সহযোগী’ সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামের জনশক্তি রপ্তানিকারক কোম্পানির মালিক দেওয়ান সমিরকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। সেই শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী এ মামলায় মেঘনাকে গ্রেপ্তার দেখানোর পক্ষে শুনানি করেন।

তিনি বলেন, “এই আসামিরা অভিনব কৌশল অবলম্বন করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ অ্যাম্বাসিগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের হানি ট্র্যাপে ফেলে বিপুল অর্থ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য চক্র দাঁড় করিয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতারণা করে আসছেন। সবশেষ সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এবং তার কাছে ৫ মিলিয়ন ডলার দাবি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।”

এ সময় মেঘনা আলমকে তিনি মেঘলা আলম সম্বোধন করেন। শুনানির এক পর্যায়ে মেঘনা তার নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করতে বলেন। এরপর বিচারক আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী আছেন কিনা জানতে চান। মেঘনা আদালতকে বলেন, কোনো আইনজীবী নেই। তিনি নিজেই কথা বলতে চান।

আদালত অনুমতি দিলে মেঘনা বলেন, “আমার নাম মেঘনা, মেঘলা নয়। সৌদি রাষ্ট্রদূতের কথা বলা হচ্ছে। আমার প্রশ্ন যে কেউ চাইলে কি সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে দেখা করতে পারে? আপনারা কি তার কাছে যেতে পারবেন?”

বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে মামলা সম্পর্কে কিছু বলার আছে কিনা জানতে চান।

এরপর মেঘনা বলেন, “আমাকে বিনা বিচারে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে কোনো আইনজীবী পাবেন না। বিষয়টি হল রাষ্ট্রদূত ঈসার সাথে আমার একমাত্র সম্পর্ক, আর কারো সাথে না।”

তিনি দাবি করেন, “সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসার সাথে আমার বিয়ে হয়। ঈসা অভিযোগ করেন, আমি নাকি তার বাচ্চা নষ্ট করে ফেলেছি। এটা মোটেও সত্য না। এ বিষয়ে আমি ঈসার সাথে কথা বলি। তাকে এসব তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকতে বলি। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিজি শফিকুরের সাথে কথা বলি। এরপরেই পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে।”

দেওয়ান সমির রিমান্ড শুনানিতে আদালতকে বলেন, “আমাকে মেঘনা আলমের বয়ফ্রেন্ড বলা হচ্ছে। এটা ভুল তথ্য, তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সাধারণ একজন মানুষ। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। আমি একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। আমি মামলার এসব ঘটনার কিছুই জানি না৷”

পরে আদালত তাদের দুজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে সমির দেওয়ানকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

এজলাস থেকে হাজতখানায় নেওয়ার সময় মেঘনা আলম সাংবাদিকদের দেখে বলতে থাকেন, “একমাত্র ঈসার সাথে আমার সম্পর্ক, আর কারো সাথে সম্পর্ক নেই। আমি ন্যায়বিচার পাচ্ছি না।” এ সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘিরে ধরে হাজতখানায় নিয়ে যান।

মডেল ও মিস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মেঘনা আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর মিস আর্থ বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। গত ৯ এপ্রিল রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।

আটকের আগে তিনি ফেইসবুক লাইভে এসে বাসার ‘দরজা ভেঙে পুলিশ পরিচয়ধারীরা’ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাকে আটক করার পরপরই লাইভটি বন্ধ হয়ে যায়। ১২ মিনিটের বেশি সময় ধরে চলা ওই লাইভ এরপর তার আইডি থেকে ডিলিট হয়ে যায়। তবে এর আগেই ফেইসবুকে তা ছড়িয়ে পড়ে।

পরদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এ মিস আর্থ বাংলাদেশকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে উপস্থাপন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ডিবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর হাকিম মো. সেফাতুল্লাহ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনাকে ৩০ দিন কারাগারে আটক রাখার আদেশ দেন।

মডেল মেঘনাকে আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে সমালোচনার মধ্যে ১২ এপ্রিল ডিএমপির ডিবি প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং তাকে মুক্তির কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

তাকে যে প্রক্রিয়ায় বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে তা অসাংবিধানিক ও মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থি কেন নয়–তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, “আমরা স্বীকার করছি গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি। গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি- মানে উনার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের আলামত বা অভিযোগ নেই, সেটি নয়। সেটির ব্যাপারে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে অচিরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

তবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দাবি করেন, মডেল মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারে বেআইনি কিছু করা হয়নি । তাকে যে আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেটির প্রয়োগও এ দেশে নতুন নয়।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যেই দেওয়ান সমিরকে গ্রেপ্তার করে ১২ এপ্রিল ভাটারা থানার এক প্রতারণার মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় ‘হানি ট্র্যাপিংয়ের’ মামলা দায়ের করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, মেঘনা আলম, দেওয়ান সমিরসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন একটি ‘সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের’ সক্রিয় সদস্য। তারা বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের দিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিক/প্রতিনিধি ও দেশীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করিয়ে কৌশলে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদের সম্মানহানীর ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করে আসছে।

এজাহারে বলা হয়, দেওয়ান সমির কাওয়াই গ্রুপ নামের একটি কোম্পানির সিইও এবং সানজানা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি জনশক্তি রপ্তানিকারক ফার্মের মালিক। আগে মিরআই ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল তার।

মামলায় বলা হচ্ছে, সামির ‘আকর্ষণীয়, স্মার্ট মেয়েদেরকে’ তার কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিতেন, যাতে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে ‘সহজে যাতায়াত’ নিশ্চিত করা যায়। দেওয়ান সমির তার ম্যানপাওয়ার ও অন্যান্য ব্যবসাকে অধিকতর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে চক্রান্তের অংশ হিসেবে অসৎ উদ্দেশ্যে তার সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ও অসৎ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কূটনীতিককে টার্গেট করে ব্ল্যাকমেইল করে বড় অংকের টাকা চাঁদা হিসেবে দাবি করে আদায় করে থাকে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *