বৃহস্পতিবার, ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৬ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

৫ বছরের শিশু দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা

Exif_JPEG_420

বিশেষ প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাগ গ্রামে পাঁচ বছরের এক শিশুকে দিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা করাচ্ছেন তার স্বজনরা। তার কাছে চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন হাজার হাজার নারী-পুরুষ ভিড় করছেন।

তবে অবুঝ শিশুকে দিয়ে কবিরাজির নামে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিশু সাদ্দাম হোসেনের (৫) বাবা উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাগ গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন। ঢাকায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন তিনি।

মাস দেড়েক আগে কোলের শিশুসন্তানকে দিয়ে কবিরাজি ব্যবসা শুরু করেন। চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করছে এই শিশু কবিরাজের স্বজনরা। জটিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসার নামে গত এক মাস পনেরো দিন ধরে চলমান এই অপচিকিৎসার আড়ালে স্থানীয় একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বুধবার সরেজমিন জালাল উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের প্রবেশ পথেই যানজট। প্রায় এক কিলোমিটার যানজট ও আধা কিলোমিটার দীর্ঘ নারী-পুরুষের লাইন ঠেলে পৌঁছাতে হলো পাঁচ বছর বয়সী কবিরাজ সাদ্দাম হোসেনের বাড়িতে। বাড়ির উঠানে মানুষের ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবে গ্রামের সরু আধা পাকা রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য রিকশা, ভ্যান, ভটভটি, মটরসাইকেলসহ নানা যানবাহন। দীর্ঘ যানজটের পর রাস্তার দুই ধারে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু। সারিতে রয়েছেন হিন্দু-মুসলিম সবাই। নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি।

শিশুটিকে সবাই কবিরাজ বলে সম্বোধন করছেন। পানি ও তেলপড়া এবং ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। শিশুটি তার দাদার কোলে চড়ে বোতলভর্তি পানি ও তেলের শিশিতে ফুঁক দিচ্ছেন। পাশেই টেবিলে প্লাস্টিকের একটি ছোট বালতি রাখা হয়েছে। সেখানে হাদিয়া হিসেবে রোগীরা নগদ টাকা-পয়সা রাখছেন।

চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় ৫০ জন রোগী জানালেন, পরস্পরের মুখে রোগ ভালো হওয়ার কথা শুনেই তারা প্রথমবারের মতো এসেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোগী বলেন, দুই দিন ধরে কবিরাজের কাছে আসছি। তেল ও পানিপড়া দিয়েছে, কিন্তু কোনো উপকার পাইনি। আবার অনেকেই বলছেন, সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, শিশুটির চিকিৎসায় অনেক জটিল রোগের উন্নতি হয়েছে।

শিশুর মা বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে আমার শরীরে ব্যথা ছিল। পাঁচ বছরের ছেলের ঝাড়ফুঁকে তা ভালো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজনও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। গণমাধ্যম কর্মীরা শিশুটির বাবা ও দাদার সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।

ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম ছরওয়ার লিটন বলেন, মানুষ কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তা জানি না। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদের পাঠিয়ে ছিলাম। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নানা তোপের মুখেও পড়তে হচ্ছে। তবে উপজেলা প্রশানের নিকট বিষটি অবগত করেছি । বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিমুল ইহসান তৌহিদ বলেন, এটা সম্পূর্ণ কুসংস্কার। এ চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক কোনো ব্যাখ্যা নেই। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান জানান, এটা একটা ধান্দাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। সংবাদ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কবিরাজি চিকিৎসা বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়ে এসেছি এবং পরববর্তীতে কোনো প্রকার চিকিৎসা দিলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *