শনিবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ধর্ষণের শিকার থাইল্যান্ডের নারীর বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করে বিপাকে ওসি

ফেনী প্রতিনিধি: বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ এবং মারধরের অভিযোগে ফেনীর এক বাসিন্দার বিরুদ্ধে জেলার সদর মডেল থানায় মামলা করেন থাইল্যান্ডের নাগরিক এক নারী। মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওই নারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পুলিশের প্রশংসা করেন। প্রশংসাসূচক এই বক্তব্যের ভিডিও ধারণ করেন ওসি, যা ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

নিজেকে ধর্ষণের শিকার দাবি করা একজন নারীর ভিডিও এভাবে ধারণ করা এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ওই নারীর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ওসির কক্ষে বসে পুলিশের প্রশংসা করে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন এক নারী। ফেসবুকে ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে ওই নারীকে কটাক্ষ করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফেনী টিমের সদস্য তন্বী সোম বলেন, ওই নারী নিজে ধর্ষণের শিকার এবং নির্যাতিত, এমন অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। ভুক্তভোগী নারীর বক্তব্যের ভিডিও এভাবে ওসির মুঠোফোনে ধারণ করা এবং তা পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দুঃখজনক। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সংবেদনশীল এবং সতর্ক হতে হবে।

ফেনী জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আদালতের অনুমতি ছাড়া পুলিশ এ ধরনের কোনো ভুক্তভোগীর বক্তব্যের ভিডিও ধারণ এবং সেটি কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার বিষয়টি তো পুলিশের এখতিয়ারেই নেই। সেটি ধন্যবাদজনিত বিষয় হলেও ভিডিও রেকর্ড করে বিতরণ করা পুলিশের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। পুলিশের এই বিষয়টি মামলার পরবর্তী শুনানিতে আদালতকে অবহিত করা হবে।’

বিদেশি ওই নারীর বক্তব্য নিজের মুঠোফোনে ধারণ করার কথা স্বীকার করেছেন ফেনী মডেল থানার ওসি মো. শামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ওই নারী আমাদের কাজে খুশি হয়ে পুলিশের প্রশংসা করেছেন, যা পজিটিভ চিন্তা করে আমরা প্রচার করার জন্য বলেছি। ওই নারীর বক্তব্যে ধর্ষণের কোনো বিষয় উঠে আসেনি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটি প্রচারের পর বিরূপ মন্তব্য হবে, বিষয়টি আমাদের ধারণায় ছিল না। আমি লজ্জিত, বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ করছি।’

গত সোমবার ফেনী সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করা হয়। মামলাটিতে মোখসুদুর রহমান (৪৮) নামের একজন এবং অজ্ঞাতপরিচয় দুজনকে আসামি করেন থাইল্যান্ডের নাগরিক ওই নারী। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোখসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, থাইল্যান্ডের বাসিন্দা ওই নারী হংকংয়ে ব্যবসা করতেন। এর সূত্রেই সেখানে মোখসুদুরের সঙ্গে পরিচয়। ভিসা জটিলতায় মোখসুদুর গ্রেপ্তার হয়ে হংকংয়ের কারাগারে ছিলেন। তখন তাকে কারামুক্ত হতে সাহায্য করেন ওই নারী। কারামুক্ত হয়ে মোখসুদুর রহমান বাংলাদেশে চলে আসেন। বিয়ের আশ্বাসে বাংলাদেশে ডেকে এনে গত বছরের ১২ অক্টোবর ওই নারীকে মোখসুদুর ধর্ষণ করেছেন বলে মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়।

মামলার এজাহারে এ ছাড়া অভিযোগ করা হয়, মোখসুদুরকে ব্যবসার জন্য ২ লাখ ১০ হাজার হংকং ডলার ও বেশ কিছু স্বর্ণালংকার দিয়েছেন ওই নারী। ধর্ষণের ঘটনার পর নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সময় তিনি এসব টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মোখসুদুরকে বলেন। পুনরায় বাংলাদেশে এসে গত রোববার মোখসুদুরের বাড়িতে গেলে তাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় ওই নারীর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে।

২০১৯ সালের ২৭ মার্চ এক মাদ্রাসাছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তার মা ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জিজ্ঞাসাবাদের নামে ওই মাদ্রাসাছাত্রীর বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সাইবার আইনে মামলা হলে সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আট বছরের কারাদণ্ড হয়।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ