বুধবার, ৩০শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৫ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আ.লীগ থেকে এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক, বহিষ্কারের আভাসে পদত্যাগের ঘোষণা

শাহ্ সোহানুর রহমান, রাজশাহী ব্যুরো: আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়কের পদ পেয়ে যান শামীমা সুলতানা মায়া নামে এক নারী ব্যবসায়ী।

রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা বিতর্কের মুখে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দলটির এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তবে বিষয়টি জানতে পেরে তড়িঘড়ি দল থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে একটি বিপণিবিতানের সিঁড়িতে বসে সাংবাদিকদের এ পদত্যাগের কথা জানান তিনি।

এনসিপির কয়েকজন নেতা জানান, হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও তৎকালীন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, তার স্ত্রী শাহিন আক্তার রেনী ও মেয়ে আনিকা ফারিহা জামান অর্নার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন শামীমা সুলতানা মায়া। ওই সময় তিনি নানা সুযোগ সুবিধাও নিয়েছিলেন। মূলত তিনি আওয়ামী লীগেরই কর্মী ছিলেন। তার বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভোল পাল্টে বিপ্লবী বনে যান তিনি। বাগিয়ে নেন এনসিপির জেলা কমিটির পদ।

এনসিপির এক সূত্র জানিয়েছে, সর্বশেষ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীতে এনসিপির জরুরি সভা হয়। সেখানে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ চিহ্নিত করে মায়াসহ ৫ জনের ব্যাপারে আলোচনা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে দল থেকে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয় ও বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়। তবে মিটিং শেষে একজন তাকে বিষয়টি জানিয়ে দেন। ফলে কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারের নোটিশ আসার আগেই তড়িঘড়ি করে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন মায়া।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শামীমা সুলতানা মায়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আগে কখনো কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা কমেন্ট করা হয়েছে, সেখানে আমি নির্দোষ হওয়ার সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়িক সব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’

এ বিষয়ে এনসিপির জেলা কমিটির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, এনসিপির রাজশাহী মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী প্রভাব খাটিয়ে জেলাও নিয়ন্ত্রণ করছেন। মঙ্গলবার বিকেলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক নেতা জানিয়েছেন, কমিটি অনুমোদনের সময় মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মায়াসহ কয়েকজনের আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার কথা জানতেন। তবু রহস্যজনক কারণে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে এটা নিয়ে তীব্র বিরোধ ও দুপক্ষের মারধরের ঘটনা ঘটে। জুলাই যোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। সবশেষ রোববার মিটিংয়ে শক্তভাবে উপস্থাপন হয় ও মায়াসহ ৫ জনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে এনসিপির রাজশাহী অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক ইমরান ইমনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। ফলে তারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম বলেছেন, মিটিংয়ে একক কারও কথায় নয়, সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার আগেই শুনছি উনি পদত্যাগ করলেন। কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে এনসিপির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ