রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ডিসি-ইউএনও-এসিল্যান্ড নিয়োগে যেসব শর্ত মানতে হবে

নিরেন দাস, জয়পুুরহাট প্রতিনিধি: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীদের পদায়নে নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। সম্প্রতি ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীগণের পদায়ন নীতিমালা, ২০২২’ পরিপত্র আকারে জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

নীতিমালায় জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এসিল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি)-সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। আগের নীতিমালায় যে অস্পষ্টতা ছিল তা নতুন নীতিমালায় তা দূর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নতুন নীতিমালা জারি করায় ‘বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নীতিমালা, ২০১৫’ এবং ‘জেলা প্রশাসক, অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং মহানগর হাকিম হিসেবে কর্মকর্তা নির্বাচন বা পদায়নের নীতিমালা-১৯৯৭ (সংশোধিত ২০১০, ২০১৩, ২০১৫)’ বাতিল করা হয়েছে।বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়ন

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়ন করা হবে। বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়নের জন্য জেলা প্রশাসক পদে কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন

বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রাপ্তির এক বছর পর জেলা প্রশাসক পদে পদায়নের জন্য ফিট লিস্ট প্রণয়ন করা হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিট লিস্টে থাকা কর্মকর্তাদের উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার/অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক/সচিব, জেলা পরিষদ/প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভা এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার উভয় পদে মোট কমপক্ষে ২ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

পূর্ববর্তী ৫ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের রেকর্ড এবং সমগ্র চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। প্রকল্প ও ক্রয় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান এবং বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে। ম্যাজিস্ট্রেসি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে।

জেলা প্রশাসক পদের ফিট লিস্ট প্রণয়নে আগের মতোই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে কমিটি থাকবে। নিজ জেলা বা স্বামী/স্ত্রীর জেলায় জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন করা যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন

বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়নের জন্য যোগ্য কর্মচারী বাছাই করে ফিট লিস্ট প্রণয়ন করা হবে।

ফিট লিস্টে যারা থাকবেন তাদের সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তি ও ন্যূনতম ৬ বছর চাকরিকাল পূর্ণ হতে হবে। সর্বশেষ ৫ বছরের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন, সার্ভিস রেকর্ড ও শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। বিবেচনাধীন কর্মচারীদের চাকরিকালের সততা ও সুনাম বিবেচনা করা হবে।

বিবেচনাধীন কর্মচারীর ডোসিয়ারসহ বিবেচ্য ৫ বছরের গোপনীয় অনুবেদনের গড় নম্বর ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ হতে হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কমপক্ষে এক বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কর্মচারীরা জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিবেচিত হবেন।

সম্ভাব্য শূন্য পদের ভিত্তিতে ফিট লিস্ট প্রণয়ন করা হবে। ফিট লিস্টভুক্ত কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কর্মকাল সাধারণত ২ বছর হবে। তবে বিশেষ প্রশাসনিক কারণ ছাড়া এক বা একাধিক কর্মস্থলে কর্মকাল ৩ বছরের বেশি হবে না এবং কোনো কর্মস্থল থেকে এক বছরের আগে বদলি করা যাবে না।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কর্মরত ছিলেন এমন উপজেলায় পরবর্তী সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন করা যাবে না। নিজ জেলা বা স্বামী/স্ত্রী’র জেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে পদায়ন করা যাবে না।সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন

চাকরির মেয়াদ ৩ বছর পূর্তি, নির্ধারিত প্রশিক্ষণ সমাপ্তকরণ ও চাকরি স্থায়ীকরণের পর যথাসম্ভব জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সহকারী কমিশনারদের মধ্য থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হবে।

সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কর্মকাল সাধারণত ২ বছর হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে কোনো কর্মস্থলে এক বছর পার হওয়ার পর অন্য কর্মস্থলে বদলি করা যাবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে প্রথম পদায়ন জেলা সদর ও মহানগর অধিভুক্ত এলাকার বাইরে এই নীতিমালায় উল্লিখিত ‌‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণির উপজেলায় হবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে এক বছর দায়িত্ব পালনের পর কর্মচারীদের দক্ষতা, সততা, জনসেবা প্রদানের মানসিকতা ইত্যাদি যাচাই করে ‘ক’ শ্রেণির উপজেলায় বা রাজস্ব সার্কেলে পদায়ন করা যাবে।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ থেকে প্রত্যাহারের পর সহকারী কমিশনার বা সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পরবর্তী পদায়নের জন্য কর্মচারীদের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা যাবে। নিজ জেলা বা স্বামী/স্ত্রীর জেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়ন করা যাবে না।

এছাড়া নীতিমালায় সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে পদায়নের শর্তের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন অফিসার/রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর/জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার/নেজারত ডেপুটি কালেক্টর/চার্জ অফিসার পদে পদায়ন এবং জেলা পরিষদের সচিব/ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার/পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা/সমপর্যায়ের পদে পদায়নের শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে নীতিমালায়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকারের পরিচালক, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, সমপর্যায়ের পদে পদায়নের নিয়মও নতুন নীতিমালায় জানানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরে পদায়ন

মাঠ পর্যায়ে কমপক্ষে ৫ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মচারীদের মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরে পদায়ন করা যাবে না। তবে প্রশাসনিক কারণে এ সময়সীমা শিথিল করা যাবে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মচারীদের মাঠ প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরে পদায়নের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতা বিবেচনা করতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারের সহকারী সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব/উপসচিব পদমর্যাদার কর্মচারীরা মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরে কর্মরত থাকলে তাদের মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যথাসম্ভব মাঠ প্রশাসনে পদায়ন করতে হবে।

মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরের পদে চাকরিকাল সাধারণত ৩ বছর হবে। বিশেষ প্রশাসনিক কারণে ৩ বছরের আগে অন্য মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তরে পদায়ন করা যাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ সংক্রান্ত বিধি/আদেশ/নির্দেশনা অনুযায়ী প্রেষণে কর্মচারী পদায়ন করা হবে। লিয়েন সংক্রান্ত প্রণীত বিধি অনুযায়ী লিয়েনে কর্মচারী পদায়ন করা হবে। লিয়েন থেকে ফেরার পরে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মচারীকে উপযুক্ততা বিবেচনায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে মাঠ প্রশাসনের পদে পদায়ন করা হবে।

স্বামী-স্ত্রী চাকরিজীবী হলে একই কর্মস্থলে বা নিকটবর্তী জেলা/উপজেলায় পদায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে হবে। কর্মচারীর নিজের বা পিতা/মাতা/স্ত্রী/স্বামী/সন্তানের দুরারোগ্য ব্যাধির ক্ষেত্রে সুষ্ঠু চিকিৎসার স্বার্থে সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন করা যাবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, মাঠ প্রশাসন হইতে মাঠ প্রশাসন বা মাঠ প্রশাসন থেকে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর বা মন্ত্রণালয়/বিভাগ/দপ্তর থেকে মাঠ প্রশাসনে পদায়নের ক্ষেত্রে অর্থ/পঞ্জিকা বছরের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা যাবে। এছাড়া নীতিমালায় জেলা ও উপজেলার শ্রেণীবিন‌্যাস করে পদায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on linkedin
LinkedIn
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on tumblr
Tumblr
Share on telegram
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ