মঙ্গলবার, ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পরিবহনে চাঁদাবাজি থামাতে গিয়ে মার খেলেন পুলিশের বড় কর্মকর্তা

নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীতে যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার সময় আটক দুই ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে নরসিংদী পৌর এলাকার আরশীনগর রেলক্রসিং–সংলগ্ন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

হামলায় আহত নরসিংদী সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বেলা ১১টার দিকে আরশীনগর মোড়ে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা আদায়ের সময় দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটক দুজনকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে হামলা চালান একদল লোক। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন আটজন পুলিশ সদস্য নিয়ে শহরের বীরপুর এলাকায় একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল থেকে ফেরার পথে বেলা ১১টার দিকে আরশীনগর মোড়ে অটোরিকশা ও সিএনজি থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে দেখতে পেয়ে সেখানে থামেন আনোয়ার হোসেন।

এ সময় দুজনকে হাতেনাতে আটক করা হলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালান। পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের পর আটক দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যান হামলাকারীরা।

এ সময় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য কিলঘুষিতে আহত হন। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আহত অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।

প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরিদা গুলশানারা কবির বলেন, ‘সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন আমাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তার ঘাড়ে ও পায়ে রক্ত জমে গেছে। আমরা কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছি। তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলা হয়েছে।’

পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৩০–৩৫ জন লোক অতর্কিতভাবে আমার ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে কিলঘুষি মারতে থাকে। এরপর তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদী পৌরসভার সিএনজি ও অটোস্ট্যান্ডের ইজারাদার আলমগীর হোসেন বলেন, ‘পৌরসভা থেকে ২৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছি আমি, কিন্তু অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রায়ই ইজারার টাকা তুলতে বাধা দেন। এর আগেও তিনি আমাদের দুজনকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠান। আমরা বৈধভাবে ইজারা নিয়ে যদি কাজ করতে না পারি, তাহলে সরকারকে দেওয়া ২৫ লাখ টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পৌরসভার নিয়ম ও বৈধ ইজারার শর্ত মেনে সড়ক থেকে টাকা তোলার সময় পুলিশ বাধা দেওয়ায় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা মিথ্যা, ভিত্তিহীন।’

প্রসঙ্গত, ইজারাদার আলমগীর হোসেন নরসিংদী শহর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা যুবদলের সভাপতি মহসীন হোসাইনের (বিদ্যুৎ) বড় ভাই।

ইজারাদার সড়ক থেকে চাঁদা তুলতে পারেন কি না, জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও নরসিংদী পৌরসভার প্রশাসক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, এই ইজারার আওতায় নির্ধারিত কয়েকটি স্ট্যান্ড থেকে টাকা তোলার কথা। কোনোভাবেই সড়কে চলাচলরত যানবাহন থেকে টাকা তোলার সুযোগ নেই।

হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, হামলার ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

, বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যায়যায়কাল এর সর্বশেষ সংবাদ