
কাজী আল আমিন, বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, তাই মানুষের সাথে কোন জীবজন্তুর তুলনা হয় না। পৃথিবীর সকল সৃষ্টি শুধু মানুষের জন্য। আর সেই সেরা জীব যদি পশুর আচরণ করে তখন বুঝতে হবে আইয়ামে জাহিলিয়াত এখনো বিদ্যমান। শতবর্ষ পূর্বে ত্রাসের রাজত্ব ছিল, জোর যার মুল্লুক তার, কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে স্কুল কলেজ শিক্ষা দীক্ষায় মানুষকে আধুনিকতা ও ন্যায়পরায়ণতা শিখিয়েছে।
বর্তমানে শতবর্ষপূর্বের অনুসারী ত্রাসের ও আইয়ামে জাহিলিয়াতের রাজত্ব কায়েম করে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলাযর বুধন্তি ইউনিয়নের বারঘরিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে জাহিদুল ইসলাম স্মিথ (৪২)।
অভিযোগে উল্লেখিত, গত ২০ জুলাই দুপুর অনুমান ২টায় একই ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামের জামাতা মৃত ফুল মিয়ার ছেলে মনতাজ মিয়া (৫৮)। বরগায় জমিতে উপার্জনে সম্বল ঘোড়াটি রশি বেঁধে ঘাস খেতে দিলে, পাশে থাকা জাহিদুল ইসলাম স্মিথ এর ঘাসের জমিতে পা দিতে না দিতেই তার লোক দ্বারা ঘোড়াটি ধরে নিয়ে যায়। জাহিদুল ইসলাম স্মিথ এর বাড়িতে রয়েছে পশু নির্যাতনের আয়না ঘর। সে ঘরে প্রায় ১৫ দিন চতুষ্পদী বোবা পশুটিকে অনাহারে আটকে রাখেন।
নিরীহ মনতাজ মিয়া উপার্জনের সম্বলটি আনার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও ১০ হাজার টাকা ছাড়া ঘোড়া ফেরত দেয়নি। এলাকার মেম্বারসহ বিভিন্ন লোক মারফতে অনুরোধ করালেও টাকা ছাড়া ঘোড়াটি ফেরত দিতে অনীহা। এক পর্যায়ে ১৫দিন পর নির্যাতনে শরীরে ক্ষতবিক্ষত অনাহার ঘোড়াটি যখন প্রায় অর্ধমৃত, তখনই গত ২ আগস্ট তার ঘাসের জমিতে রেখে গেলে, ঘন্টাখানেক পর ঘোড়াটি জমিতেই মারা যায়।
জাহিদুল ইসলাম স্মিথ আওয়ামী পরিবারের সদস্য। তার পিতা সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। বিপুল ধন সম্পদের মালিক। শ্রীনগর গ্রামে ৮০ শতাংশ জায়গা জমি তাদের পরিবারের। অর্থ সম্পদের অহংকারে দাপট খাটিয়ে এলাকার নিরীহ জনসাধারণকে জিম্মি করে রেখেছে। এলাকায় কৃষক ও সাধারণ মানুষের গৃহপালিত পশু তার জমিতে পা রাখলেই ধরে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা দাবি করে আসছে। অসহায় নিরীহ লোকগুলা পারছে না মুখ ফুটে বলতে।
ভুক্তভোগী মনতাজ মিয়া উপজেলা চর-ইসলামপুরের স্থায়ী বাসিন্দা, বিবাহ সূত্রে বুধন্তি ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে বিগত তিন বছর যাবত বাস করে আসছেন। মনতাজ মিয়া ২টি ঘোড়া দিয়ে এলাকার কৃষকদের জমি চাষে উপার্জন করে দুই ছেলে ছয় মেয়ে নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। একমাত্র ঘোড়াটাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে কথায় কথায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। কোথায় পাবে সেই জুলুমবাজের বিচার।
এ বিষয়ে এলাকাবাসী শাহানা বেগম জানান, ঘোড়াটি সাথে আমার গাভীর বাছুর ও নিয়েছিল কিন্তু আমি তার কাছে যাওয়ার পর সে আমার কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করে, কোনরকম হাতে পায়ে ধরে ও এলাকার একজনকে নিয়ে ছাড়িয়ে এনেছি। তবে ঘোড়াটি সে ছাড়তে নারাজ। ১০হাজার টাকা দাবি করেন। সে খুবই জুলুমবাজ, তাদের জায়গা সম্পত্তি বেশি বিদায় আমাদেরকে এভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করে আসছে। তারা বিরাট দাপটশালী লোক।
এভাবে অনেকেই তার এসব অত্যাচার নির্যাতনের কথা সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন।
এ বিষয়ে শ্রীনগর এলাকার শফিক মিয়া (মেম্বার) জানান, ঘোড়াটি আটক করার কথা শুনে, আমি বলে দিয়েছি ছেড়ে দেওয়ার জন্য তবে ছাড়ার পর কি হয়েছে তা জানিনা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মনতাজ মিয়া কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার একমাত্র সম্বল ঘোড়াটিকে মেরে আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমি এখন কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করে পরিবারের ভরণ পোষণ করব। আমি এই নির্যাতনের বিচার চাই। স্মিথ ঘোড়াতো ফেরত দিল ১৫ দিন পর, কিন্তু মৃত অবস্থায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম স্মিথকে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম জানান, এমন অত্যাচার খুবই দুঃখজনক। আমি অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেহই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।