শুক্রবার, ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ,২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

এর সর্বশেষ সংবাদ

সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন নয়, ঐক্যই হোক মূল শক্তি

মো. ওসমান গণি ইলি: বর্তমানে সাংবাদিক সমাজে কিছু বিষয় গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে যারা আজ চিৎকার করে সাংবাদিকদের আওয়ামী লীগপন্থী বা বিভিন্নদলের পা চাটা বলে দোষারোপ করছেন, তারাই বিগত সময়ে এই দলের ছায়াতলে থেকে নানা সুবিধা ভোগ করেছেন। যখন তারা ক্ষমতার ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তখন তাদের কণ্ঠে কোনও প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু এখন সুবিধা কমে যাওয়ায় তারা নীতিবাক্যের মুখোশ পরে কৃত্রিম ন্যায়ের কথা বলছেন।

এ ধরনের আচরণ কেবল ব্যক্তিগত হীনমন্যতার প্রকাশ নয়, বরং সাংবাদিক সমাজের ঐক্য ও পেশাদারিত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই পরিস্থিতি আমাদের পেশাকে যেমন কলঙ্কিত করে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের মাঝেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। তারা বুঝে উঠতে পারে না আসলে সত্যিকার সাংবাদিকতা কী হওয়া উচিত।

সাংবাদিকতা কোনো রাজনৈতিক দলের পদলেহন করার জায়গা নয়। এটি একটি মহান দায়িত্ব, যেখানে মানুষের কথা, রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থাকে। যেকোনো পক্ষপাতমূলক অবস্থান এ পেশার মর্যাদা হানি ঘটায়।

আজ যারা সাংবাদিকদের বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন, তারা মূলত নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছেন। বিভাজনের রাজনীতি করে কেউই স্থায়ীভাবে লাভবান হতে পারে না। কিছু সময়ের জন্য আলোচনায় থাকতে পারলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা ইতিহাসে অপমানজনক অধ্যায় হিসেবেই বিবেচিত হন।

আমাদের মনে রাখতে হবে—সাংবাদিকদের একতা মানে শুধু একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা নয়, বরং সেটি একটি প্রতিরোধের শক্তি। এটি এমন এক প্রতিরক্ষা দেয়াল, যা সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, অধিকার, এবং মর্যাদা রক্ষা করে।

একটি শ্রেণি সবসময় চেষ্টা করে সাংবাদিকদের মধ্যে গোষ্ঠীবাজি, লবিং ও দলাদলি ঢুকিয়ে দিতে। কারণ তারা জানে—সংবাদকর্মীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে তাদের অন্যায়, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার ঢাকা যাবে না। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, কারা এই বিভক্তির বীজ বপন করছে।

আমরা চাই না আরেকটি প্রজন্ম কেবল গ্রুপিং, কোন্দল আর রাজনীতির বলি হোক। সাংবাদিকতার পাঠশালায় আমরা শিখেছি, তথ্যের জন্য লড়াই করতে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলম চালাতে। এ শিক্ষাই আমাদের পথ দেখাক।

এই সংকটকালে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হলো—বিভিন্ন সংগঠন, মত ও অবস্থানকে সম্মান দিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা। মতের ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু লক্ষ্য হোক অভিন্ন—সাংবাদিকদের অধিকার, নিরাপত্তা এবং পেশাগত মর্যাদা রক্ষা।

সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত আক্রোশ বা রাজনৈতিক মতাদর্শকে পেশার ভিতরে টেনে আনা অনুচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে, তবে সেটির সমাধানও হতে হবে সাংবাদিকতার নীতিমালার ভেতরে থেকেই। ব্যক্তিগত গালাগালি বা অপমান নয়—বিচার চাই সংগঠন ও নিয়মের মাধ্যমে।

সবশেষে বলব, সাংবাদিকতা কখনোই স্বার্থসন্ধানীদের খেলার মাঠ হতে পারে না। আমাদের প্রয়োজন স্বচ্ছতা, সাহস, সততা ও সংহতি। আসুন, বিভেদ নয়—ঐক্যের পতাকা তুলে ধরি, একসাথে এগিয়ে যাই আমাদের পেশার মর্যাদা রক্ষায়।

লেখক: সাংবাদিক

সাধারণ সম্পাদক
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা, কক্সবাজার

Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp
Tumblr
Telegram

বিভাগের জনপ্রিয় সংবাদ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *